উদ্ভিদ

Flora ( ফ্লোরা ) : ফ্লোরা একটি লাতিন শব্দ । এর অর্থ "ফুলের দেবী"। ফ্লোরা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের উদ্ভিদকুলকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় ।
Fauna ( ফনা ) : রোমান পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ফলনের দেবীর নাম ফনা বা “ফাউনাস”। ফনা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রাণীকুলকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় ।

থিওফ্রাস্টাস উদ্ভিদকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করেন যথাঃ

  • বীরুৎ বা হার্ব : নরম কান্ড বিশিষ্ট ছোট উদ্ভিদকে হার্ব বা বীরুৎ বলে। যেমনঃ আলু, বাদাম, পাট , সরিষা, ধান, গম ইত্যাদি।
  • গুল্ম বা শ্রাব : যে সকল উদ্ভিদ কাষ্ঠল, বহুবর্ষজীবী, সাধারনত একক কাণ্ডবিহীন এবং গোড়া থেকে অধিক শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে ঝোপে পরিণত হয়, তাদের গুল্ম বা শ্রাব বলে। যেমনঃ জবা, রঙ্গন, মরিচ, গোলাপ, লেবু, গন্ধরাজ ইত্যাদি।
  • উপগুল্ম বা আন্ডারশ্রাব : শ্রাব বা গুল্মের চেয়ে ছোট আকারের কাষ্ঠল উদ্ভিদকে উপগুল্ম বা আন্ডারশ্রাব বলে । যেমনঃ কল্কাসুন্দা , আঁশ শেওড়া , বেলী ইত্যাদি।
  • বৃক্ষ বা ট্রি : সুস্পষ্ট একক কান্ডবিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী উচু কাষ্ঠল উদ্ভিদকে বৃক্ষ বা ট্রি বলে । যেমনঃ আম , জাম , কাঁঠাল , সেগুন ইত্যাদি।

উদ্ভিদের মুখ্য পুষ্টি উপাদান ১৬ টি যথাঃ নাইট্রোজেন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,কার্বন,হাইড্রোজেন , অক্সিজেন, আয়রন,জিংক,ম্যাঙ্গানিজ,মেলাবোডেনিয়াম,বোরন,কপার,ক্লোরিন , সালফার। কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ব্যতিত অন্যান্য ১৩ টি উপাদান উদ্ভিদ মাটি হতে সংগ্রহ করে থাকে এবং এই ১৩ টি উপাদান কে বলা হয় খনিজ পুষ্টি (Mineral Nutrients)। উদ্ভিদ কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে বাতাস এবং পানি হতে।

শৈবাল :

  • শৈবালের বৈশিষ্ট্য:
    • এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে।
    • এরা সুকেন্দ্রিক।
    • কোন পরিবহন টিস্যু নেই।
  • সর্পিল ক্লোরোপ্লাস্ট পাওয়া যায় - Spirogyra নামক শৈবালে।
  • শৈবালের উদাহরণ: Spirogyra, Ulothrix.
  • Polysiphonia - একটি সামুদ্রিক লোহিত শৈবাল।
  • ক্লোরেলা: ক্লোরেলা এক প্রকার সবুজ এককোষী শৈবাল। এতে ১৭৭ প্রকার অ্যামাইনো এসিড থাকায় একে প্রোটিন খাদ্যের আদর্শ উৎস বলে। ক্লোরেলায় ভিটামিন A, B, C ও K বিদ্যমান। পানি শোধনসহ মহাকাশযান ও ডুবোজাহাজের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে এবং মহাকাশচারীদের খাদ্যের অভাব মেটাতে ক্লোরেলা ব্যবহৃত হয়।

ছত্রাক :

ছত্রাক: Agaricus গণভুক্ত ছত্রাককে মাংসল বা কানকো ছত্রাক বলা হয়। এরা ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুম নামেও পরিচিত। এরা অপুষ্পক ও মৃতজীবী। মাশরুম এক প্রকার ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ যা সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি অত্যধিক পুষ্টিকর, প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং অসংখ্য রোগের জন্য উপকারী একটি খাদ্য। মাশরুমের চাষ পৃথিবীতে শুরু হয়েছে মূলত গ্রীক ও রোমান সভ্যতার সময় হতে। Agaricus এর দেহ প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। যথাঃ মাইসিলিয়াম এবং ফুট বড়ি। এর ফুট বড়ি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

  • ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য:
    • এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে।
    • কোন পরিবহন টিস্যু নেই।
    • এদের দেহে ক্লোরোফিল নেই। এরা পরভোজী বা মৃতজীবী হয়।
    • এরা পুষ্টির জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল।
  • ছত্রাকের উদাহরণ: Mucor, Agaricus, Penicillium.
  • ঈস্ট : ইস্ট এক প্রকার ছত্রাক। এটি অ্যালকোহল প্রস্তুতে, রুটি শিল্পে, খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ব্যাঙের ছাতা: এক ধরনের ছত্রাক (Agaricus)|
  • অসংখ্য সবুজ বা নীল স্পোর (কনিডিয়া) উৎপন্ন করে বলে Penicillium কে বলা হয় - সবুজ বা নীল ছত্রাক।
  • লাইকেন: শৈবাল ও ছত্রাকের সমন্বয়ে গঠিত উদ্ভিদ।
  • অটোফাইট : যে সকল উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজেই প্রস্তুত করতে পারে, তাকে স্বভোজী বা অটোফাইট বলা হয়। ছত্রাক ছাড়া পৃথিবীর অধিকাংশ উদ্ভিদ অটোফাইট।

ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব: ছত্রাক উপকারী ও অপকারী দুরকম ভূমিকাই আছে।

উপকারী দিকঃ

  • পাউরুটির কারখানায় রুটি ফাঁপা করার কাজে ঈস্ট ব্যবহৃত হয়।
  • পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে Penicillium ব্যবহৃত হয়।
  • Agaricus (মাশরুম) পৃথিবীর বহুদেশে সুপ্রিয় খাদ্য।
  • মদ্য শিল্পে (ওয়াইন, হুইস্কি, বিয়ার) ঈস্ট ব্যবহৃত হয়।
  • ঈস্ট খাদ্য উপযোগী এককোষীয় প্রোটিন উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ।

অপকারী দিকঃ

  • ধানের কাণ্ডপচা, ধানের পাতায় বাদামী রোগের জন্য ছত্রাক দায়ী।

মসবর্গীয় উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য:

  • দেহকে কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায়।
  • মূল নেই। মূলের পরিবর্তে রাইজয়েড আছে।
  • কোন পরিবহন টিস্যু নেই।
  • ফুল ও ফল হয় না।
  • মসবর্গীয় উদ্ভিদের উদাহরণ: Riccia, Bryum, Barbula.

ফার্ণবর্গীয় উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য:

  • দেহকে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায়।
  • দেহে পরিবহন টিস্যু আছে।
  • ফুল ও ফল হয় না।
  • ফণিমনসা কি ধরনের উদ্ভিদ: ফার্ণবর্গীয়।
  • পৃথিবীর প্রাচীনতম উদ্ভিদ: ফার্ণবর্গীয় উদ্ভিদ।
  • রৌদ্রে জন্মাতে পারে বলে 'সানফার্ণ' বলা হয় - Pteris কে।

নগ্নবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য: (এদেরকে আদিম সবীজ উদ্ভিদও বলা হয়)

  • দেহ মূল, কাণ্ড, পাতায় বিভক্ত করা যায়।
  • দেহে পরিবহন টিস্যু আছে।
  • এদের ফুল হয় কিন্তু ফল হয় না কারণ ফুলের গর্ভাশয় থাকে না।
  • নগ্নবীজী উদ্ভিদের উদাহরণ: Cycus, Pinus, Gnetum

আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য:

  • দেহকে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায়।
  • দেহে পরিবহন টিস্যু আছে।
  • এদের ফুল এবং ফল হয়।

আবৃতবীজী উদ্ভিদ দুই প্রকার যথা : ক) একবীজপত্রী, খ) দ্বিবীজপত্রী।

একবীজপত্রী উদ্ভিদের উদাহরণ: ধান, গম, ইক্ষু, তাল, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, ভূট্টা ইত্যাদি।

দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের উদাহরণ: পৃথিবীর অধিকাংশ উদ্ভিদ দ্বিবীজপত্রী। যেমন: আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, ছোলা, সীম, মটর ইত্যাদি।

  • ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের উদাহরণ: ধান, গম, ছন ইত্যাদি।
  • তৈলবীজ উৎপাদনকারী উদ্ভিদের নাম: সরিষা, সয়াবিন, তিল, বাদাম, তিসি, সূর্যমুখী এবং নারিকেল।
  • শালগম : এক ধরনের রুপান্তরিত মূল।
  • মিষ্টি আলু: এক ধরনের রূপান্তরিত মূল।
  • রূপান্তরিত কাণ্ডের উদাহরণ: আদা, পিয়াজ ইত্যাদি।
  • জলজ উদ্ভিদ সহজে পানিতে ভাসতে পারে কেন: এদের কাণ্ডে অনেক বায়ু কুঠুরী থাকে।
  • জলজ উদ্ভিদ: হিজল, করচ, ডুমুর।
  • কচুরীপানা পানিতে ভাসে কেন: কাণ্ড ফাঁপা।
  • ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করা হয় কোন গাছের কাঠ থেকে: উইলো গাছ।
  • কোন উদ্ভিদের শ্বাসমূল আছে: সুন্দরী ।
  • চিনি উৎপাদনকারী উদ্ভিদ: বিট।
  • উদ্ভিদ মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে খাদ্য শোষণ করে ।

কিছু কিছু উদ্ভিদে মাটির নিচের শাখা অগ্রভাগে খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে স্ফীত হয়ে কন্দের সৃষ্টি হয়, এদেরকে টিউবার বলে। ভবিষ্যতে এই কন্দ প্রজননের কাজ করে। কন্দের গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত থাকে। এগুলো দেখতে চোখের মতো। এদেরকে তাই চোখ বলে। প্রতিটি চোখ থেকে একটি স্বাধীন উদ্ভিদের জন্ম হয়। এভাবেই আলুর প্রজনন সম্পন্ন হয়।

Shopping Cart
error: Content is protected !!
Scroll to Top