কম্পিউটারের প্রকারভেদ ও কার্যাবলী

কম্পিউটার বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রযুক্তি যা মানব সমাজকে সহজ করেছে এবং নতুন সময়ের সাথে সাথে নতুন উন্নতির মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কম্পিউটার একটি সরঞ্জামিক উপকরণ যা ডেটা প্রসেস করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে । এর মৌলিক গঠনতত্ত্ব এক হলেও আকৃতি, কার্যসম্পাদনের গতি ও প্রক্রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ সংগঠনের ভিন্নতার কারণে কম্পিউটারের প্রকারভেদ রয়েছে । যেমন-সুপার কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার, মাইক্রো কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার প্রভৃতি। অবস্থান, ব্যবহার ও পরিবেশ বুঝে বিভিন্ন কম্পিউটার বিভিন্ন কাজে লাগানো যেতে পারে। কম্পিউটারের প্রকারভেদ মূলত তার ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে।

কম্পিউটারের মৌলিক গঠন/কাঠামো

'কম্পিউটার' আমাদের কাছে একটি নতুন আবিষ্কার। কিন্তু এর পেছনে বহুকালের বহুজনের অবদান রয়েছে। যোগ বিয়োগ করতে সক্ষম প্রথম গণনা যন্ত্রের আবিষ্কারক ক্লেইলি পাসকেল ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে। ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে গণ ফ্রাইড গুণ ও ভাগ করতে পারে এমন যন্ত্র তৈরি করেন। কিন্তু ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ চার্লস ব্যাবেজই হলেন আধুনিক কম্পিউটারের জনক। তিনিই সর্বপ্রথম পাঁচটি অংশে সম্পূর্ণ আধুনিক কম্পিউটারের গঠনতত্ত্বের আবিষ্কারক। ব্যাবেজ কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন ধাতব যন্ত্রাংশ দিয়ে। তখনো সূক্ষ্ম নানা যন্ত্রাংশ তৈরি না হওয়ায় তিনি আধুনিক কম্পিউটারের পরিপূর্ণ রূপ দিতে পারেননি। তবে আমরা আজ যে কম্পিউটার ব্যবহার করছি তাতে কিন্তু মূলত চার্লস ব্যাবেজেরই গঠনতত্ত্ব অনুসরণ করা হয়। চার্লস ব্যাবেজের কম্পিউটারের গঠনতত্ত্বে রয়েছে পাঁচটি অংশ - ১. স্টোর, ২. মিল, ৩. কন্ট্রোল, ৪. ইনপুট, ৫. আউটপুট। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং আই. বি. এম কোম্পানির যৌথ প্রয়াসে প্রথম ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি হয় ১৯৪৪ সালে। তবে প্রথম পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার 'ইয়ানিক' তৈরি হয় ১৯৪৬ সালে। একটি কম্পিউটারের অনেক যন্ত্রাংশ থাকলেও এর গঠনরীতির প্রধান দুটি দিক লক্ষ করা যায়। একটি হলো যান্ত্রিক সরঞ্জাম বা হার্ডওয়্যার অন্যটি প্রোগ্রাম সম্পর্কিত বা সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যারের মধ্যে পড়ে তথ্য সংরক্ষণের স্মৃতি, অভ্যন্তরীণ কার্যের জন্য ব্যবহৃত তাত্ত্বিক দিক, তথ্য সংগ্রহের জন্য ইনপুট অংশ, ফলাফল প্রদর্শনের জন্য আউটপুট অংশ এবং সকল বৈদ্যুতিক বর্তনী। এসব যান্ত্রিক সরঞ্জামের কাজ হলো প্রোগ্রামের সাহায্যে কম্পিউটারকে কর্মক্ষম করে তোলা। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নির্দেশ করার জন্য কম্পিউটারের স্মৃতিতে যে কার্যবিধি সন্নিবেশিত হয় তাকে প্রোগ্রাম বলা হয়।

কম্পিউটারের প্রকারভেদ

কম্পিউটারের গঠন ও ক্রিয়া নীতির ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথাঃ

  1. অ্যানালগ কম্পিউটার
  2. ডিজিটাল কম্পিউটার
  3. হাইব্রিড কম্পিউটার
কম্পিউটারের প্রকারভেদ

১. অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer) : অ্যানালগ শব্দ এসেছে Analogus শব্দ থেকে যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সদৃশ । অ্যানালগ কম্পিউটারে বর্ণ এবং সংখ্যার বদলে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল সংকেত বা আনালগ সিগন্যাল ব্যবহার করা হয়। বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অ্যানালগ সংকেতের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পর্যায়ক্রমিকভাবে উঠানামা করা । এনালগ কম্পিউটারের ডাটা প্রক্রিয়াকরণের জন অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার (Operational Amplifier-OP-AMP) নামক বিশেষ বর্তনী ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের বর্তনী সাধারণ যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ছাড়াও লগারিদম, অন্তরকলন (Differentiation). সমাকলন (Integration) ইত্যাদি কাজ সরাসরি করতে পারে। অ্যানালগ কম্পিউটার সময়ের বা এনালগ বৈদ্যুতিক সংকেতের উপর নির্ভর করে নির্মিত কম্পিউটার। এক কথায় যে সকল কম্পিউটার বৈদ্যুতিক সংকেতের ওপর নির্ভর করে ইনপুট গ্রহণ করে প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পাদিত করে, সেসব কম্পিউটারকে অ্যানালগ কম্পিউটার বলা হয়। মোটরগাড়ির স্পিডোমিটার, স্লাইড রুল, অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার ইত্যাদি অ্যানালগ কম্পিউটারের উদাহরণ। সাধারণত চাপ, তাপ, তরল পদার্থের প্রবাহ ইত্যাদির উঠা-নামা বা হ্রাস-বৃদ্ধি পরিমাপের জন্য অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া গাড়ি, উড়োজাহাজ, মহাকাশ যান ইত্যাদির গতিবেগ, বায়ু, তরল ও কঠিন পদার্থের চাপ এবং কোনো বিশেষ স্থানের বা কক্ষের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। অ্যানালগ কম্পিউটারের ফলাফলের সুক্ষ্মতা তুলনামূলকভাবে কম।

২. ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer) : ডিজিটাল কম্পিউটারের ডিজিটাল কথাটি Digit শব্দ হতে উৎপত্তি, যার অর্থ অংক । ডিজিটাল কম্পিউটারে ডিজিটাল সংকেত বা বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু বা বন্ধ করে হিসাব কার্য করা হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু হলে ’1; এবং বন্ধ হলে ‘0’ এ প্রক্রিয়ায় কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ দুটি সংখ্যার সাহায্যে বর্ণ, সংখ্যা, লেখা, ছবি নির্মাণ, স্থাপত্য নির্মাণ কাজের নক্সা সবকিছুই করা হয় অর্থাৎ যাবতীয় গাণিতিক ও যুক্তিমূলক কাজসমূহ বাইনারী ডিজিট অর্থাৎ ‘0’ এবং ‘1’ এর ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হয়। যে সকল কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্রিয়া সম্পন্ন করে, সেসব কম্পিউটারকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়। তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাবের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটার বৈদ্যুতিক সিগন্যালের পরিবর্তে ডিজিট (0/1) ব্যবহার করে। ডিজিটাল কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাবের পর প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণত মনিটরে প্রদর্শিত হয়। ডিজিটাল কম্পিউটারের গতি ও কার্যকারিতা অ্যানালগ কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি ও ভালো। আবার ডিজিটাল কম্পিউটারের ফলাফলের সুক্ষ্মতা অ্যানালগ কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটর ABC (Atanasoff Berry Computer)। বর্তমান বাজারে প্রচলিত প্রায় সকল কম্পিউটারই ডিজিটাল পদ্ধতির কম্পিউটার। ডিজিটাল কম্পিউটারকে আবার চারভাগে ভাগ করা যায় যথাঃ মাইক্রোকম্পিউটার , মিনিফ্রেম কম্পিউটার , মেইনফ্রেম কম্পিউটার , সুপার কম্পিউটার যা পরবর্তী ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ।

৩. হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer ) : যে কম্পিউটার অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয় কম্পিউটারের নীতির সমন্বয়ে গঠিত তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে । এই কম্পিউটারে সাধারণত উপাত্ত সংগৃহীত হয় অ্যানালগ প্রক্রিয়ায় এবং সংগৃহীত উপাত্ত সংখ্যায় রূপান্তরিত করে ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করা হয়। একে সংকর কম্পিউটারও বলা হয়। হাইব্রিড কম্পিউটার অত্যন্ত দামি। তাই কেবলমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়; যেমন- মিসাইল, সমরাস্ত্র, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, নভোযান, রাসায়নিক দ্রব্যের গুণাগুণ নির্ণয়, পরমাণুর গঠন-প্রকৃতি নির্ণয়, পরীক্ষাগারে ঔষধের মান নির্ণয় ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া হাসপাতালে ব্যবহৃত হাইব্রিড কম্পিউটারের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। রোগীর রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া, শরীরের তাপমাত্রা ইত্যাদির উপাত্ত অ্যানালগ অংশের সাহায্যে গ্রহণ করার পর উপাত্তগুলো ডিজিটাল কম্পিউার ব্যবহারযোগ্য সংখ্যা সংকেতে রূপান্তরিত হয়ে ডিজিটাল অংশে স্থানান্তরিত হয়। ডিজিটাল অংশ উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করে রোগীর বর্তমান অবস্থা ফলাফল যা আউটপুট আকারে তুলে ধরে।

ডিজিটাল কম্পিউটারের প্রকারভেদ

আকার-আয়তন, কাজ করার ক্ষমতা, স্মৃতি ও সুযোগ ইত্যাদির ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটারকে প্রধানত চারভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, সুপার কম্পিউটার, মেইন ফ্রেম কম্পিউটার, মিনি ফ্রেম কম্পিউটার এবং মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার (Micro or Personal Computer) ।

বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার

সুপার কম্পিউটার (Super Computer) : ক্ষমতা আকৃতি ইত্যাদির ভিত্তিতে অতি বড় কম্পিউটারকে বলা হয় সুপার কম্পিউটার । সুপার কম্পিউটারের অনানুষ্ঠানিক নাম "Number crunchier' । এ কম্পিউটার অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে। কম্পিউটারটি প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন বিলিয়ন হিসাব করতে সক্ষম। সারা বিশ্বে সুপার কম্পিউটারের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সুক্ষ্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ, নভোযান, জঙ্গী বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরক্ষা গবেষণা, পারমাণবিক চুল্লি ও সুপারসনিক বিমানের ডানার ডিজাইন তৈরি, সিমুলেশন ও মডেলিং করতে এবং মহাকাশ গবেষণা ইত্যাদি কাজে সুপার কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে (জুন, ২০২২) বিশ্বের দ্রুততম সুপার কম্পিউটার যথাক্রমে Fugaku (জাপান), Summit (যুক্তরাষ্ট্র), Sierra (যুক্তরাষ্ট্র), Sunway Taihul.ight (চীন), ভারত 'পরম' নামে সুপার কম্পিউটার তৈরি করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ।

মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer) : সুপার কম্পিউটারের চেয়ে ছোট আকারের কিন্তু পার্সোনাল বা মাইক্রোকম্পিউটার নয়, সেসব কম্পিউটারকে বলা মেইনফ্রেম কম্পিউটার। মেইনফ্রেম কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি বড় কম্পিউটার যার সঙ্গে অনেকগুলো কম্পিউটার বা ডাম্ব টার্মিনাল (Dumb terminal) যুক্ত করে এক সঙ্গে অনেক মানুষ কাজ করতে পারে- সুপার কম্পিউটারে যে রকমটি করা যায়। ব্যাংক, বীমা, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এবং বৈজ্ঞানিক কর্ম তৎপরতা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানে মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: IBM 4143, UNIVAC 1100, NCRN 8370

মিনি কম্পিউটার (Mini Computer) : মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট আকারের কিন্তু পার্সোনাল কম্পিউটারের চেয়ে বড় আকারের কম্পিউটারকে মিনি কম্পিউটার বা মধ্যম সারির কম্পিউটার (Midrange Computer) বলা হয়। মেইন ফ্রেম এবং মিনি কম্পিউটারে একই ধরনের কাজ করা যায়। মিনি কম্পিউটার আকারে ছোট এবং কাজের ক্ষমতাও কম। যদিও কিছু মিনি কম্পিউটার একজন ব্যবহারকারীর ব্যবহারের উপযুক্ত কিন্তু বেশির ভাগ মিনি কম্পিউটারেই একই সাথে অনেকগুলো টার্মিনালে কাজ করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হাসপাতাল, বড় বড় কারখানা, বহুজাতিক কোম্পানি, প্রযুক্তিগত গবেষণায় ও বিশ্লেষণ কাজে মিনি কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। PDP-II, IBM S/34, IBM S/36, NCR S/9290, NOVA3 ইত্যাদি মিনি কম্পিউটারের উদাহরণ।

মাইক্রোকম্পিউটার (Microcomputer) : মেইনফ্রেম বা মিনি কম্পিউটারের তুলনায় মাইক্রোকম্পিউটারের আকার অনেকগুণ ছোট। সাধারণত একজন ব্যবহারকারী একা একটি মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন। এজন্য মাইক্রোকম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা সংক্ষেপে শুধু পিসি (PC) বলা হয়। মাইক্রোকম্পিউটার হচ্ছে কারিগরি নাম, আর পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি হচ্ছে চলতি নাম। ১৯৭৫ সালে তড়িৎ প্রকৌশলী হেনরি এডওয়ার্ড রবার্ট কর্তৃক ডিজাইনকৃত Altair-৮৮০ কে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসরভিত্তিক কম্পিউটার (মাইক্রোকম্পিউটার) হিসেবে গণ্য করা হয়। এজন্য হেনরি এডওয়ার্ড রবার্টকে মাইক্রোকম্পিউটারের জনক বলা হয়। আকারে ছোট এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় মাইক্রোকম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে কম্পিউটার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। মাইক্রোকম্পিউটারকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন-

বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোকম্পিউটার
  • ডেস্কটপ (Desktop): এ জাতীয় কম্পিউটার ডেস্কে বা টেবিলে স্থাপন করে ব্যবহার করা যায় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
  • ল্যাপটপ বা নোটবুক (Laptop): ১৯৮১ সালে এপসম কোম্পানি প্রথম ল্যাপটপ কম্পিউটার প্রবর্তন করে। ল্যাপ (Lap) অর্থাৎ কোলের উপর স্থাপন করে কাজ করা যায়, এমন ছোট আকারের কম্পিউটারকে ল্যাপটপ বলা হয়। ল্যাপটপ কম্পিউটার দেখতে অনেকটা ছোট ব্রিফকেসের মতো যার ওপরের অংশে থাকে একটি সমতল এলসিডি বা এলইডি স্ক্রিন এবং নিচের অংশে থাকে কি-বোর্ড, পাওয়ার বাটন এবং টাচপ্যাড। এতে মাউসের পরিবর্তে টাচপ্যাড ব্যবহার করা হয়। ল্যাপটপ কম্পিউটার পাওয়ার বুক ইত্যাদি নামেও পরিচিত। দেখতে স্মার্ট, ওজনে হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় দিন দিন ল্যাপটপের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিচার্জেবল ব্যাটারি বা এসি অ্যাডাপ্টার ল্যাপটপে থাকার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে এটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চালানো যায়।
  • নোটবুক (Notebook): নোটবুক কম্পিউটার সাধারণত ল্যাপটপ কম্পিউটারের চেয়ে আকারে ছোট এবং ওজন কম হওয়ায় সহজে বহনযোগ্য। এটি দেখতে অনেকটা নোটবুকের ন্যায় বিধায় এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। এ ধরনের কম্পিউটারগুলোতে কি-বোর্ড, পাওয়ার বাটন, টাচপ্যাড এবং ডিসপ্লে হিসেবে এলসিডি বা এলইডি যুক্ত থাকে। কিন্তু কোনো প্রকার অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ থাকে না।
  • হেন্ডহেল্ড বা পামপিসি বা পামটপ (Handheld or Palm PC or Palmtop): PDA- এর পুরোনাম হলো Personal Digital Assistants, ১৯৯৩ সালে ইলেকট্রনিক নির্মাতারা পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিটেন্ট তৈরি করেন। পিডিএ এর প্রাথমিক ভার্সন ছিল অ্যাপলের 'নিউটন'। এ ধরনের কম্পিউটার ক্ষুদ্রাকৃতির এবং দেখতে অনেকটা ক্যালকুলেটরের ন্যায়, যা হাতের তালুর মধ্যে রেখে ব্যবহার করা যায়, এমনকি পকেটে রেখে সহজে বহন করা যায়। এটি পকেট কম্পিউটার নামেও পরিচিত। এ ধরনের কম্পিউটারগুলোতে কোনো প্রকার ডিস্ক ড্রাইভ থাকে না। সাধারণত টাচ স্ক্রিন ও ডিজিটাল পেনের সাহায্যে এ জাতীয় কম্পিউটারগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
  • ট্যাবলেট পিসি বা ট্যাব (Tablet PC or Tab): ট্যাবলেট পিসি লেটার সাইজের প্লেটের অনুরূপ এক ধরনের কম্পিউটার যার স্ক্রীনে হাতের আঙ্গুল স্পর্শ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা ডেটা প্রদান করা অথবা ডিজিটাল কলম দিয়ে লেখা বা ড্রয়িং করা যায়। ট্যাবলেট পিসিতে ভয়েস ইনপুট ব্যবস্থা থাকে যার সাহায্যে ব্যবহারকারী কথা বলার মাধ্যমে কম্পিউটারে নির্দেশ বা ডেটা ইনপুট করতে পারেন। অ্যাপল কর্তৃক বাজারজাতকৃত ট্যাবলেট পিসি i Pad ।
  • ফ্যাবলেট (Phablet) : ফ্যাবলেট একটু বড় ধরণের মোবাইল ফোন। এটার স্ক্রিন সাইজ সাধারন মোবাইল ফোন থেকে বড় করে দেয়া হয়েছে যেন লোকজন এটাতে সহজভাবে বই পড়তে পারে আর ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারে. ফ্যাবলেটে যা করতে পারবে, একটা স্মার্ট মোবাইল ফোনেও তাই করতে পারবে, শুধু ফ্যাবলেটের স্ক্রিন সাইজ একটু বড় বলে কাজ করতে সুবিধা হয়। সাধারণত পাঁচ ইঞ্চি মাপের স্মার্টফোনের চেয়ে আকারে একটু বড় আবার সাত ইঞ্চি মাপের ট্যাবলেটের চেয়ে আকারে ছোট পণ্যগুলোকে ‘ফ্যাবলেট’ বলেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। যদি অন্যভাবে বলি তাহলে এরকম হবে, অ্যান্ড্রয়েড ফোন+ট্যাবলেট=ফ্যাবলেট।
  • স্মার্টফোন (Smartphone): স্মার্টফোন হলো বিশেষ ধরনের মোবাইল ফোন যা মোবাইল কম্পিউটিং প্লাটফর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আইবিএম সাইমন ছিল বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন। অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড দ্বারা নির্মিত একটি আধুনিক ইন্টারনেট ও মাল্টিমিডিয়া সংযুক্ত স্মার্টফোন হলো আইফোন। অ্যাপলের সাবেক সিইও স্টিভ জবস ২০০৭ সালে প্রথম আইফোন অবমুক্ত করেন।

এম্বেডেড কম্পিউটার (Embedded Computer)

এম্বেডেড কম্পিউটার হলো একটি বিশেষায়িত কম্পিউটার সিস্টেম যা একটি বৃহৎ সিস্টেম বা মেশিনের অংশবিশেষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কোনো প্রচলিত কম্পিউটার নয়। এম্বেডেড সিস্টেমে সাধারণত একটি মাইক্রোপ্রসেসর বোর্ড এবং সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রোগ্রামিং সম্বলিত একটি রম থাকে। আধুনিক এম্বেডেড সিস্টেমে মাইক্রোকন্ট্রোলার এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এম্বেডেড কম্পিউটারের উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং এটি আকারে মাইক্রোকম্পিউটারের চেয়ে অনেক ছোট। এম্বেডেড সিস্টেমে অনেক বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়। যেমন; একটি এয়ার কন্ডিশনারে ঘরের একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নির্দেশ করে কমান্ড দেয়া হলো। ঘরের তাপমাত্রা ঐ নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছামাত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে এয়ার কন্ডিশনার বন্ধ হয়ে যাবে। আর এয়ার কন্ডিশনার এই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কাজটি করবে যন্ত্রটির ভিতর বিদ্যমান এম্বেডেড কম্পিউটার। সুনির্দিষ্ট এই বিশেষ কাজটি করার জন্য কোনো আলাদা মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। ডিজিটাল ইন্টারফেস সম্বলিত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ (যেমন-ঘড়ি, মাইক্রোওয়েভ, ভিসিআর, কার প্রভৃতি) তে এম্বেডেড সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। সেল ফোন, এয়ার কন্ডিশনার (AC), প্রিন্টার, থার্মোস্ট্যাট, ভিডিও গেম, ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত ATM প্রভৃতিতে এম্বেডেড সিস্টেমের ব্যাপক ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে।

Shopping Cart
error: Content is protected !!
Scroll to Top