আসল সত্যটি হল মৌলের প্রতীক হয় কিন্তু সংকেত হয় না । সংকেত হয় যৌগের । কয়েকটি মৌলের সমন্বয়ে যৌগ তৈরি হয় । আর সেই যৌগের সংকেত দ্বারা বুঝা যায় এতে কোন মেীল রয়েছে এবং কোন মেীলের কতটি পরমাণু এতে বিদ্যমান । মেীলসমূহের প্রতীক সাধারণত নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে তৈরি করা হয় । কিন্তু নামের প্রথম অক্ষর যদি একাধিক মেীলের একই অক্ষর হয় তখন সেক্ষেত্রে প্রথম দুই অক্ষর বা পরের বিশেষ অক্ষর দ্বারা তৈরি করা হয় । কাজেই মৌলের প্রতীক জানা গেলেই কেবল যৌগের সংকেত লেখা যায় । আজকের পাঠে আমরা এই বিষয়টি ক্লিয়ার করব ইনশাআল্লাহ ।
মৌলের প্রতীক
মৌলের প্রতীক: কোনো মৌলিক পদার্থের পূর্ণ নামের সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে ঐ মৌলের প্রতীক বলে। প্রতীকসমূহ প্রধানত মৌলের ল্যাটিন বা ইংরেজি এবং দু একটি ক্ষেত্রে অন্য ভাষার নাম থেকে উদ্ভূত। যেমন- বোরন ও জিরকোনিয়ামের নামদ্বয় আরবি ভাষা থেকে এসেছে। এক বর্ণবিশিষ্ট প্রতীক হলে তা বড় হাতের অক্ষরে এবং দুই বর্ণবিশিষ্ট প্রতীক হলে প্রথমটি বড় হাতের এবং পরেরটি বা পরের উল্লেখযোগ্যটি ছোট হাতের অক্ষর হয়। যেমন- হাইড্রোজেনের প্রতীক H, অক্সিজেনের O, ক্লোরিনের Cl, বেরিয়ামের Be ।
মৌল | ল্যাটিন নাম | প্রতীক |
---|---|---|
সোডিয়াম | Natrium | Na |
পটাসিয়াম | Kalium | K |
আয়রন | Ferrum | Fe |
টিন | Stannum | Sn |
অ্যান্টিমনি | Stibium | Sb |
কপার | Cuprum | Cu |
রূপা | Argentum | Ag |
সোনা | Aurum | Au |
পারদ | Hydrargyrum | Hg |
লেড | Plumbum | Pb |
নতুন মৌলের নামকরণ করা হয়: আবিষ্কারকগণ কর্তৃক প্রস্তাবিত নামানুসারে।
যৌগের সংকেত
যৌগিক পদার্থের অণু একাধিক মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। কোনো যৌগের অণুতে বিভিন্ন মৌলের যে সংখ্যক পরমাণু বিদ্যমান তাদের সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে ঐ যৌগিক পদার্থের সংকেত বলে।
যে যে মৌলের পরমাণু নিয়ে যৌগিক পদার্থটির অণু গঠিত সেগুলোর প্রতীক পাশাপাশি লিখে প্রতিটি মৌলের পরমাণু সংখ্যা উল্ল্যেখের মাধ্যমে যৌগের অণুর সংকেত নির্ধারণ করা হয়। মৌলের প্রতীকের ডান দিকের নিচের কোণায় পরমাণুর সংখ্যা লেখা হয়। তবে সংখ্যা এক হলে তা উল্লেখ করা হয় না । উদাহরণস্বরূপ, পানির একটি অণূতে হাইড্রোজেনের দুইটি পরমাণু এবং অক্সিজেনের একটি পরমাণু বিদ্যমান। সুতরাং পানির সংকেত হচ্ছে .
স্থূল সংকেত: কোনো যৌগের অণুতে বিদ্যমান মৌলসমূহের পরমাণুগুলোর সংখ্যা কী ক্ষুদ্রতম পূর্ণসংখ্যার অনুপাতে আছে, তার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে ঐ যৌগের স্থূল সংকেত বলে। যেমন- বেনজিনের স্থূল সংকেত CH ৷
আণবিক সংকেত: যে সংকেত যৌগের অণুতে বিদ্যমান পরমাণুসমূহের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে তাকে আণবিক সংকেত বলে। যেমন- বেনজিনের আণবিক সংকেত
গাঠনিক সংকেত: কোনো যৌগের অণুতে তার উপাদানসমূহ পরস্পরের সাথে কিভাবে যুক্ত আছে তা দেখানোর জন্য যে সংকেত ব্যবহৃত হয়, তাকে ঐ যৌগের গাঠনিক সংকেত বলে। যেমন: হাইড্রোজেন গ্যাস, পানি, অ্যামোনিয়া ও মিথেনের গঠন নিম্নরুপ:
আন্তঃআণবিক শক্তি: যে কোনো পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে এমন একটি আকর্ষণ শক্তি কাজ করে, যার ফলে অণুগুলো একে অন্যের সাথে নিবিড়ভাবে সংঘবদ্ধ থাকে। আবার পদার্থের অণুগুলো তাদের মধ্যবর্তী শূণ্যস্থানের মধ্যে দ্রুতগতিতে কাঁপে। ফলে অণুগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে চায়। এ আকর্ষণ শক্তি, যার ফলে অণুগুলো পরস্পর ঘন সন্নিবিষ্ট হয় বা হতে চায় এবং এ বিকর্ষণ শক্তির (যার ফলে অণুগুলো পরস্পর হতে দূরে সরে যায় বা যেতে চায়) মিলিত শক্তিকেই আন্তঃআণবিক শক্তি বলে ।
হাইড্রোজেন বন্ধন: মৌলসমূহের মধ্যে হাইড্রোজেনের (H) তড়িৎ ঋণাত্মকতা সবচেয়ে কম ও ফ্লোরিনের (F) তড়িৎ ঋণাত্মকতা সবচেয়ে বেশি। তাই এ দুটির মধ্যে গঠিত H.....F বন্ধন (হাইড্রোজেন বন্ধন) সবচেয়ে শক্তিশালী ।