রেচনতন্ত্র | Excretory System

আমরা নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ি। অতি গরমে গা ঘামে। এগুলো রেচন পদার্থ। অর্থাৎ রেচন পদার্থ হলো সেইসব পদার্থ যেগুলো দেহের জন্য ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয়। রেচন বলতে দেহের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বোঝায়। বিপাকের ফলে পানি, কার্বন ডাইঅক্সাইড, ইউরিয়া প্রভৃতি দূষিত পদার্থ দেহে প্রস্তুত হয়। এগুলো নিয়মিত ত্যাগ না করলে স্বাস্থ্যহানি ঘটে। এইসব দূষিত পদার্থ দেহের মধ্যে জমে বিষক্রিয়া দেখা দেয় এবং এর ফলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। এ সকল বর্জ্য পদার্থ প্রধানত নিঃশ্বাস বায়ু, ঘাম এবং মূত্রের সাথে দেহের বাইরে চলে যায়। ফুসফুস, চর্ম ও বৃক্ক এই তিনটি রেচন অঙ্গ। কার্বন ডাইঅক্সাইড ফুসফুসের মাধ্যমে এবং লবণ জাতীয় ক্ষতিকর পদার্থ চর্মের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। বৃক্কের মাধ্যমে দেহের নাইট্রোজেনযুক্ত তরল, দূষিত পদার্থ পরিত্যক্ত হয়। মূত্রের মাধ্যমেই দেহের শতকরা আশি ভাগ নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ পরিত্যক্ত হয়। তাই বৃক্কই প্রধানত রেচন অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। যে তন্ত্র রেচন কার্যে সাহায্য করে তাকে রেচনতন্ত্র বলে ।

রেচনতন্ত্র

অল্প পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড দেহের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বেশি পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড বিষাক্ত যা দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শ্বসন ক্রিয়ার সময় আমাদের দেহকোষ বর্জ্য হিসেবে এই গ্যাস তৈরি করে। কোষ থেকে রক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড বহন করে ফুসফুসে নিয়ে যায়। নিঃশ্বাসের বায়ুতে শতকরা ৪ ভাগ কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে। নিঃশ্বাসের বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে জলীয় বাষ্প থাকে।

ঘর্ম বা ঘাম : মানবদেহের বহিরাবরণ চর্ম বা ত্বক। ত্বকে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। এগুলো হলো লোমকূপ। এই সকল লোমকূপ দিয়ে ঘাম বের হয়। এই ঘামে সাধারণত পানির সাথে লবণ ও সামান্য কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর বা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ থাকে।

মূত্র : বৃক্ককে মূত্র তৈরির কারখানা হিসেবে অভিহিত করা হয়। দেহের পেছনের দিকে মেরুদন্ডের দুই পাশে দুইটি বৃক্ক থাকে। বৃক্ক ছাঁকনির মতো কাজ করে। যকৃৎ আমাদের দেহের অতিরিক্ত অ্যামাইনো এসিডকে ভেঙ্গে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে। এগুলো দেহের জন্য ক্ষতিকর। বৃক্ক রক্ত থেকে ক্ষতিকর পদার্থ ছেঁকে নেয়। এই ক্ষতিকর পদার্থসমূহ পানির সাথে মিশে হালকা হলুদ বর্ণের মূত্র তৈরি করে এবং ইউরেটারের মাধ্যমে মূত্র থলিতে জমা হয়। নির্দিষ্ট সময় পর মূত্রের বেগ অনুভূত হয়। মলদ্বারের মতো মূত্রথলির দ্বারেও সংকোচন ও প্রসারণ পেশি থাকে। একে মূত্রপথ বলে। প্রয়োজনে পেশি সংকোচন ও প্রসারণের ফলে দেহ থেকে মূত্র নির্গত হয়।

  • রেচন পদার্থ: বিপাক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নাইট্রোজেনজাত বর্জ্য পদার্থগুলোকে রেচন পদার্থ বলে।
  • নাইট্রোজেনজাত বর্জ্য পদার্থ: ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন।
  • রেচনতন্ত্রের অংশ: বৃক্ক, ইউরেটার, মুত্রথলি, মুত্রনালী।
  • মানুষের প্রধান রেচন অঙ্গের নাম: বৃক্ক।
  • কোন অঙ্গে মুত্র তৈরি হয়: বৃক্ক (Kidney).
  • কোন অঙ্গ শরীর হতে বর্জ্য পদার্থ ইউরিয়া বের করে দেয়: বৃক্ক (Kidney).
  • বৃক্কের গঠনগত এবং কার্যকরী একক: নেফ্রন।
  • ফুসফুস রেচন অঙ্গ নয় কেন: ফুসফুস বিপাক ক্রিয়ার উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ CO₂ শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু তারপরও ফুসফুস রেচন অঙ্গ নয় কারণ CO₂ নাইট্রোজেনজাত কোন পদার্থ নয়।
  • একজন স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন মূত্র ত্যাগ করে: ১৫০০ মিঃ লিঃ।
  • মূত্রের PH: 
  • Acid base balance বৃক্কের কোন অংশের কাজ: Proximal tubule.
  • প্রধান রেচন অঙ্গ: বৃক্ক, কারণ দেহের বর্জ্য পদার্থের শতকরা ৭৫% বৃক্ক নিষ্কাশন করে।
  • ডাই ইউরেটিক্স: যে সকল দ্রব্য খেলে ঘন ঘন প্রস্রাব (micturition) হয়, তাদেরকে ডাই ইউরেটিক্স বলে।
  • কোনগুলো ডাই ইউরেটিক্স: চা, কফি, অ্যালকোহল, শরবত ইত্যাদি।
  • মূত্রের বর্ণের জন্য দায়ী কোনটি: ইউরোক্রোম। এর কারণ মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়।
  • প্রত্যেকটি বৃক্কে নেফ্রনের সংখ্যা: ১০ থেকে ১২ লক্ষ।
  • আমিষ জাতীয় খাদ্য খেলে মুখের অম্লতা বৃদ্ধি পায় আবার ফলমূল এবং তরিতরকারি খেলে সাধারণত ক্ষারীয় মূত্র তৈরি হয়।
  • বৃক্কের কাজ: মানব দেহে সোডিয়াম পটাশিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি, অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • ডায়ালাইসিস/ Dialysis: রেচনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ কিডনি। কিডনি যখন অসুস্থ, অক্ষম বা বিকল হয়ে পড়ে তখন রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ (যেমন, ইউরিক এসিড, ইউরিয়া) নিষ্ক্রান্ত করার জন্য ডায়ালাইসিস করতে হয। এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত পরিশোধ সম্পন্ন করা হয়। অর্থাৎ রেনাল ফেইলরির ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস করতে হয়।
  • গ্লোমারোলোনেফ্রাইটিস: গ্লোমারোলোনেফ্রাইটিস কিডনী গাঠনিক একক নেফ্রনের গ্লোমেররুলাস অংশের অসুখের নাম।
Shopping Cart
error: Content is protected !!
Scroll to Top